1. admin@bnewstime.com : admin : Md Rayhan
  2. ovro.sajib@gmail.com : Md Sojib Hossain : Md Sojib Hossain
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
স্বাগতম....

বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩
  • ৯৫ বার পঠিত

“বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন যে ভাবী, বড় মেয়ের বিশেষ কোন খুঁত আছে কি?”

পাশের বাসার কাকীর করা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আমার মা বাকশূন্য হয়ে গেলো। তবুও আমতা আমতা করে বললো,“না বড় মেয়ে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। ক্যারিয়ারে সম্পূর্ন মনোযোগ দিতে চাচ্ছে।”

তখনি দ্বিতীয় তলার কাকী বলে উঠলেন,“শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়, ভাবী(প্রশ্ন করা কাকী) নাহয় নতুন এসেছে এ পাড়ায় তাই কিছু জানে না। তাই একটা কিছু বলে বুঝিয়ে দিচ্ছো। কিন্তু কতজনকে বোঝাবে? সবাই তো তার মতো জানে না ব্যপারটা এমন নয়।”

পাশের বাড়ির কাকী বললো,“মানে? ভাবী কি তবে মিথ্যা বললো? অন্যকোন ব্যপার আছে? সেটা কি?”

“তুমি তো জানো না, কয়েক বছর আগের ঘটনা। ওনাদের…..।”

তাকে থামিয়ে দিয়ে মা বললো,“ভাবীরা আপনারা আমার ছোট মেয়ের বিয়েতে এসেছেন,দয়া করে আলোচনা সমালোচনা তাকে নিয়েই করুন। আমার বড় মেয়েকে ছেড়ে দিন। তাছাড়া আমার বড় মেয়ে জেনে-শুনে কিন্তু কোন ভুল করেনি। তবুও দোষারোপটা দিনশেষে তাকেই করা হয়। কারণটা সে মেয়ে তাই। মেয়ে হয়ে জন্মানো তার ভুল ছিলো।”

কাকীরা চুপ করে গেলো। হয়তো বা কিছুক্ষণ পর কিছু বলবে কিন্তু শোনার ধৈর্য হলো না আমার তাই চলে আসলাম।
*
ঘরে বসে ছিলাম। নীলাশা হুঁট করে এসে আমার হাতে কয়েকটা চকলেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,“নাও আপা খাও।”

“কি ব্যপার আজ আমাকে নিজ থেকে চকলেট দিচ্ছিস যে, ঘটনা কি?”

“তেমন কিছুই না। আজ আমার কাছে প্রচুর চকলেট আছে তাই সবাইকে দিচ্ছি। তোমাকে, মেঝ আপাকে। মেঝ আপাকে বেশি দিয়েছি, কেন জানো?”

“কেন?”

“মেঝ আপা তো কাল চলে যাবে। আর আমার জিনিসে ভাগ বসাবে না তাই বেশি করে দিলাম।”

“বাহ ছোট খুঁকি বেশ বড় হয়ে গেছে দেখি। তা এত চকলেট কোথায় পেলি?”

“কোথায় আবার ভাইয়া দিয়েছে।”

“কোন ভাইয়া?”

“ওহ তোমাকে তো বলাই হয় নাই। মামার বড় ছেলে এসেছে। যে ভাইয়াটা বিদেশ থাকতো। আমি ছোট থাকতে যে চলে গেছিলো।”

আমি চমকে উঠলাম। শান্ত কন্ঠে বললাম,“মেঘরাজ ভাইয়া?”

“হ্যাঁ। মেঘ ভাইয়া। জানো আপু ভাইয়াটা না খুব কিউট দেখতে। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমাকে কতকিছু ছিলো। খুব ভালো ভাইয়াটা।”

“ওহ। তা মেঘরাজ ভাইয়া আসবে আগে কেউ বলেনি তো?”

“কিভাবে বলবে, কেউ তো জানতোই না। হুঁট করে এসে সবাইকে চমকে দিলো।”

“ওহ।”

“ হ্যাঁ। আচ্ছা আমি যাচ্ছি। সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ তাই বিকেল থাকতেই সাঁজতে হবে।”

“আচ্ছা যাও।”

নীলাশা চলে গেলো। আমি বসে রইলাম। বাড়িটা লাল,নীল আলোতে ঝলমল করছে। সবাই খুব খুশি। শুধু আমার খুশিটা হারিয়ে গেছে। যেদিকে যাই সেদিকেই শুধু একটাই প্রশ্ন,“বড় মেয়ের আগে ছোট(মেঝ) মেয়ের বিয়ে হচ্ছে কেন?”

চোখগুলো কেমন ঝাপসা হয়ে আসলো। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠলো,

মা এসে আমার পাশে বসলেন।

“শোন মুন আমি তোকে একটা কথা বলি, তুই রাগ করিস না।”

“আমি রাগ করবো কেন? বলো কি বলতে চাও?”

“তুই আমাদের ক্ষমা করে দিস মা। আমাদের এছাড়া কোন উপায় নেই।”

“এত হেয়ালি না করে বলবে কি হয়েছে?”

“আমরা নীলিমার বিয়ে ঠিক করেছি। আমরা জানি আমরা ভুল করেছি, তোর আগে ওর বিয়ের কথা ভাবাটাও পাপ। কিন্তু কি করবো বল, আমরা তো তোর জন্য কম চেষ্টা করেনি। তোকে যে পাত্র দেখে সেই তোকে রিজেক্ট করে চলে যায়। এখানে আমাদের কি করনীয়? তোর বিয়ের আশায় বসে থাকলে দেখা যাবে নীলিমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবে, তাই আমরা নীলিমার বিয়ে ঠিক করেছি।”

“এটা তো খুব ভালো কথা। নীলিমা আমার বোন, ওর বিয়ে হবে, একটা সংসার হবে। এটা তো বেশ ভালো কথা। এখানে ভুলের কি আছে?”

“আসলে যাই হয়ে যাক তুই বড়। তোর আগে মেঝর বিয়ে হচ্ছে, এতে পাড়া-প্রতিবেশী নানা ধরনের কথা বলবে। তুই দয়া করে একটু মানিয়ে নিস।”

“এভাবে বলছো কেন? আমি জানি কি কি হতে পারে, তুমি এতসব চিন্তা না করে নীলিমার বিয়ের প্রস্তুতি নাও।”

বাবা পিছন থেকে বললেন,“সেটা তুমি না বললেও নেওয়া হবে। তোমার জন্য আমার অন্য মেয়েদের জীবন নষ্ট করা হবে না।”

মা বললো,“আমি কথা বলছি তো? তুমি নিজের কাজ করো।”

“হ্যাঁ দেখছি। মেয়ের সামনে কিভাবে কথা বলছো, এত আকুতি ভরা কন্ঠে বলার মতো কি হয়েছে আমি তো বুঝতে পারছি না।
ও কলঙ্কিত তাই ওকে কেউ বিয়ে করতে চায় না, তাই আমরা ওর কথা বাদ দিয়ে মেঝ মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি। দুদিন পর ছোট মেয়ের বিয়ে দিবো।”

পুরনো কথা ভাবতে ভাবতে চোখজোড়া ভিজে উঠলো।

গায়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়েছে। ছেলের বাড়ির লোকজনও এসেছে। নীলাশা মুনতাহাকে ডাকতে এলো,“এই বড় আপা নিচে চলো। মেঝ আপাকে সবাই হলুদ দিচ্ছে। চলো দেখবে না।”

নীলাশা কথা বলতে বলতে ঘরে ঢুকলো। ঢুকে দেখো মুনতাহা এখনো তৈরি হয়নি।

“একি আপা তুমি তো তৈরিই হওনি। যাবে না নিচে।”

“ভালো লাগছে না বনু। আমি পরে যাবো, তুমি গিয়ে মজা করো। আমার ফোন নিয়ে যাও, ছবি তোলো বন্ধুদের সাথে।”

“সে তুলবো। তুমিও চলো আপু। তুমি না গেলে কেমন দেখায়, আমি তো আমাদের তিন বোনের ছবিই তুলতে পারবো না।”

“আমি বললাম তো আমি পরে আসছি।”

এরমাঝে মা আসলো,“পরে মানে কখন? গায়ে হলুদ শেষে যাবি তুই?”

“তোমরা যাও, আমার ভালো লাগছে না।”

মা বললো,“ভালো লাগছে না বললে হবে না। তোকে না দেখে সবাই নানান কথা বলছে। এসব কথার জবাব দিতে পারবো না আমি, চুপচাপ তৈরি হয়ে নিচে আয়।”

মা এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে গেলো। নীলাশা হুঁট করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

“কি হলো বনু? কাঁদছো কেন?”

“এমনি। তুমি তৈরি হও। আমরা একসাথে যাবো।”

আমি কিছু বললাম না। নীলাশা অষ্টম শ্রেনিতে পড়ে। এতটা অবুঝ নয়, যে ঘরের মধ্যে ঘটমান ঘটনা বুঝবে না।
*
নীলাশা মুনতাহার হাত ধরে নিচে নামলো। সবাই নীলিমাকে হলুদ দেওয়া শুরু করে দিয়েছি। মুনতাহা নীলাশাকে বললো,“যাও গিয়ে মেঝ আপার সাথে ছবি তোলো। আমি এদিকটায় বসছি।”
নীলাশা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। মুনতাহা গিয়ে একপাশে চুপচাপ বসে রইলো।

কিছুক্ষণ পর নীলাশা পুনরায় মুনতাহার কাছে আসলো।

“মেঝ আপা তোমায় ডাকছে চলো।”

“নীলিমা আমায় ডাকছে কেন?”

“সেটা তো জানি না। চলো।”

মুনতাহা উঠে নীলিমার কাছে আসলো। মুনতাহা বললো,“কিছু বলবি নীলিমা?”

“হ্যাঁ। তুমি দূরে বসে আছো কেন? চলো আমরা একসাথে তিন বোন ছবি তুলবো।”

নীলাশা বললো,“হ্যাঁ আমাদের একসাথে তো ছবিই হলো না কোন?”

নীলিমা বললো,“চল এবার তুলি।”

নীলাশা নীলিমা বেশ কিছু ছবি তুললো।

মুনতাহা বললো,“আর না। শ’খানেক তুলে ফেলেছিস। আমি এখন যাচ্ছি।”

নীলাশা বললো,“আপু আর দুটো। প্লীজ।”

“একটাও না। তোর বন্ধুরা ওদিকটায় অপেক্ষা করছে, ওদের সাথে তোল।”

মুনতাহা আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে আসলো। তাড়াহুড়োয় চলে আসতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা লাগলো।

পুরুষ কন্ঠে কেউ বললো,“চোখ কপালে নিয়ে হাঁটেন?”

মুনতাহা তার দিকে তাকাতে তাকাতে বললো,“স্যরি ভু……।”

মুনতাহা থেমে গেলো। সামনে থাকা পুরুষ লোকটিও চুপ করে গেলো। পুরুষ লোকটি মেঘরাজ। না এত বছর পর, মুনতাহারের তাকে চিনতে ভুল হয়নি। কিছু সময় তারা একে-অপরের দিকে তাকালো।

মুনতাহা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,“স্যরি ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া।”

মেঘরাজ বললো,“কেমন আছো মুনতাহা?”

মুনতাহা বললো,“হ্যাঁ ভালো আছি। তুমি?”

মেঘরাজ বললো,“আমিও ভালো আছি। তোমার বর আসেনি?”

মুনতাহা চমকালো। বেশ অনেকটা চমকালো। মুনতাহা এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে ছুটে উপরে চলে গেলো।

মেঘরাজ হতভম্ব হয়ে গেলো,“যা ছুটে পালানোর মতো কি বললাম?”


চলবে,
আঁধারি_অমানিশা
#পর্ব_১
নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ বি নিউজ টাইম
Theme Customized By Shakil IT Park