1. admin@bnewstime.com : admin : Md Rayhan
  2. ovro.sajib@gmail.com : Md Sojib Hossain : Md Sojib Hossain
বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১১:২৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ :
স্বাগতম....

মিয়ার দালান

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩
  • ৭৩ বার পঠিত

আমাদের দেশে পুরোনো স্থাপনাগুলোকে তেমন রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়না। শুধুমাত্র অতি পরিচিত প্রাচীন স্থাপনাগুলো নামমাত্র রক্ষনাবেক্ষনের আওতায় থাকে। অথচ দেশের নানাপ্রান্তের এসব আমাদের শহর-গ্রাম-গঞ্জের ইতিহাসপাঠ।

সেইরকমই এক বাড়ির নাম ‘মিয়ার দালান’। অযত্নে অবহেলায় বিনা রক্ষনাবেক্ষনে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই বাড়িটি এখন ভগ্নপ্রায়। স্থানীয়ভাবে ‘মিয়ার দালান’ নামে পরিচিত বাড়িটির অবস্থান ঝিনাইদহ শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের মুরারীদহ গ্রামে।

প্রথমেই বাড়িটি নিয়ে আপনাদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য ভবনের সদর ফটকে খোদাই করা কিছু কথা তুলে দিলামঃ-
‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান।ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।”

খরস্রোতা নবগঙ্গা নদীগর্ভ থেকে ইটের গাঁথুনি করে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়ির একদম পিছনে মৃতপ্রায় নবগঙ্গা নদী। এর নির্মাণ সেইসময়ে কতোটা কষ্টসাধ্য ছিলো সেটা নদীর দিকে আসলেই বোঝা যায় যে প্রায় ২০০ বছর ধরে নদীর সাথে সংগ্রাম কীভাবে বাড়িটা এখনো টিকে আছে। ভবনের একাংশে ও ছাদে ফাটল ধরলেও দক্ষিন দিকের সিঁড়ি দিয়ে ছাদে যাওয়া যায়। দ্বিতল এই ভবনে ছোটোবড় মিলে ১৬ টা কক্ষ আছে। দরজা-জানালার উপরের অংশে ধনুক আকৃতির কারুকাজ দেখার মতো। অত্যন্ত সাবধানতার সাথে এই ভবনে চলাফেরা করতে হয়৷ সাপ তো থাকতেই পারে, তার উপর ফাটল ধরা ছাদ-দেয়াল আবার তাতেও গর্তের মতো হয়ে যাওয়া৷ কিছু বছর আগেও স্থানীয় মাদকাসক্তদের আনাগোনা এখানে সবসময়ই থাকতো৷ কিন্তু ইদানীং নাকি অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। পুরো দেয়ালে অমুক+তমুক, হ্যান ত্যান অনেক কিছু লেখা রয়েছে, ব্যপারটা বিরক্তিকর।

এবারে বাড়ির ইতিহাস নিয়ে কথাবার্তা বলা যাক।
জনশ্রুতি আছে বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সলিমুল্লাহ চৌধুরী। সাধারন মানুষের কাছে তিনি মিয়া সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন, সেই কারণেই বাড়িটি ‘মিয়ার দালান ‘ নামে পরিচিত। তার পিতা ছিলেন স্থানীয় নলডাঙ্গা রাজবংশেরর একজন প্রতাপশালী দেওয়ান। এদের পৈতৃক নিবাস ছিলো মাগুরার শালিখায়। দেওয়ান থাকাকালীন সময়ে প্রচুর ধন সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন তার বাবা। বহু ধন সম্পত্তি পেয়ে সলিমুল্লাহ বেশ বিলাশবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত করতেন। পিতার মৃত্যুর পর তার পদে স্থলাভিষিক্ত হয়ে যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় রেখে ” চৌধুরী” উপাধি গ্রহন করেন। এসময় তিনি “মুরারী” নামে দরিদ্র এক হিন্দু মেয়েকে ভালোবেসে তার দ্বিতীয় বিয়ে করেন।নাম পরিবর্তন করে তার নাম রাখা হয় ‘আসরফনেছা‘। একারনে তার প্রথম স্ত্রী রুষ্ট হন এবং তাকে একপ্রকার জটিল অবস্থার মধ্যে ফেলে দেন। ফলে চৌধুরী গভীর রাতে বজরা করে নবগঙ্গা নদী দিয়ে নতুন স্ত্রীসহ তার পৈতৃক নিবাস ত্যাগ করেন। বহু ধন-সম্পদ ও লোকজন নিয়ে তিনি একসময় নবগঙ্গা নদী বেয়ে এই গ্রামে এসে উপস্থিত হন। শোনা যায় তার স্ত্রীর নাম “মুরারী” থেকেই ‘মুরারীদহ‘ গ্রামের নামকরণ হয়েছিলো।

আবার এটাও অনেক বলেন যে ১৯৪৭ এর দেশভাগের সময় নাকি এই ভবনকে সেলিম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো। তার আগে কি হয়েছিলো তারা জানেন না।

(উপরের এই ইতিহাস আসলে জনশ্রুতি। সঠিক নাকি বেঠিক সেটা জানি না। তবে খোদাই করা কাব্যিক লেখা থেকে এরকম কিছুই অনুমান করা যায়। ভবনের মালিকদের মধ্যে একজনের সাথে কথা বলে জানলাম এই বাড়ি নাকি সেলিম চৌধুরীর। আমার মনে হয় সেলিম চৌধুরীই আসলে সলিমুল্লাহ চৌধুরী অথবা তার কোনো একজন ছেলে কিংবা নাতি)

যেভাবে যাবেনঃ
এটি ঝিনাইদহ জেলাশহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শহরের যেকোনো স্থান থেকে আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডে আসতে ৫/১০ টাকা অটোবাইক ভাড়া লাগে। এরপর এখান থেকে ভ্যান বা অটোতে করে মুরারীদহ গ্রামের ‘মিয়ার দালান’ যাওয়া যায় ১০ টাকা ভাড়ায়।

বি দ্রঃ যেখানে সেখানে খাবার, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন ফেলবেন না।এই বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলা খুব দরকারী। এই বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুরোটাই জঙ্গলাবস্থায় আছে, তার উপর ভেতরে এতো ময়লা আবর্জনা, সব ট্যুরিস্ট স্পটেরই একই অবস্থা।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর
© স্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ বি নিউজ টাইম
Theme Customized By Shakil IT Park